(২০১৩র মূল ইংরেজি লেখার বঙ্গানুবাদ করেছেন Zahed Ahmed)
যা জানো না তা স্বীকার করো, তোমার জানা নিয়া তুমি বিনয়ী হও, তুমি আজকে যা জানলে তা ধারণ করো, সবসময় যে সচেষ্ট ও সত্যনিষ্ঠ সে-ই তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ
রামাদান বা রমজান হচ্ছে ‘সোয়ম’ পালনের মাস, বাংলায় আমরা বলি সিয়াম সাধনার মাস, যখন মাসব্যাপীসংযম রক্ষার ঐশী নির্দেশ রয়েছে অনেকেই আমরা আহ্নিক মেনে উপবাস করি, খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকি ।
উপবাস বা ‘রোজা’ পালনের পাশাপাশি সালাত বা নামাজ ও অন্যান্য অনেক উপাসনা-আরাধনার মাধ্যমে আমরাআল্লাহর ‘সন্তুষ্টি’ লাভের চেষ্টা করে থাকি এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাদের উপর করুণা ও কৃপা বর্ষণ করেন বলেইবিশ্বাস করি।
কাজেই, উপবাস করা ছাড়াও রোজার দিনের পালনীয় আচারকৃত্যের তালিকা অনেক দীর্ঘ। ভোরের আগে জেগেউঠে সেহরি, দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, কোরান তেলাওয়াত, রাতের বেলায় বিশেষ তারাবি নামাজ এবংঅন্যান্য অনেক ইবাদত-বন্দেগি।
এবং এইসবের মাঝখানে একটা আকর্ষণীয় অংশ হচ্ছে সন্ধেবেলা ব্যয়বহুল বিচিত্র খানাপিনার ইফতার যার মধ্যদিয়ে সারাদিনের দীর্ঘ উপবাস আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙা হয় এবং পরবর্তী সেহরির আগ পর্যন্ত অবারিত খানাপিনাচালানো যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে বেশিরভাগেরই ধারণা রোজা পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহকে খুশি করি বা আল্লাহর ‘সন্তুষ্টি’ লাভের চেষ্টা করি, কিন্তু রোজার তাৎপর্যপূর্ণ দিকটা হচ্ছে যে এর মাধ্যমে গরিবের অনাহারজনিত কষ্ট উপলব্ধিকরবার এবং এর থেকে হতদরিদ্রের সহায় হবার শিক্ষা অর্জন করা।
যাই হোক, উপোস করা বা রোজা পালন ব্যতিক্রমী কিছু নয়, এমনও নয় যে এটা খালি ইসলাম ধর্মেই আছে, একেশ্বরবাদী বিশ্বাসে বলীয়ান প্রায় সমস্ত ধর্মে এই আচারকৃত্য অবশ্যপালনীয় হিশেবে বিভিন্ন ধরনে বিভিন্ন মেয়াদেজারি আছে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই কৃত্যাচারটি কেবল কয়েকটি দিনের বা মাসের মেয়াদি জিনিশ নয়, এটা তাদের কাছেঅত্যন্ত কঠোর একটি শৃঙ্খলা এবং নানান নিয়মে বছরব্যাপীই প্রায় চালু। বৌদ্ধ ধর্মে সংযমের শিক্ষা অনেকপরিব্যাপ্ত।
কয়েক দিন বা কয়েক মাস কেবল নয়, এমনও হয় যে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ মাসের পর মাস দিনের পর দিনতাদের সংযম সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আহার ও অন্য সমস্ত জাগতিক আয়েশ বিলাস পরিহার করে চলছেন, শুধুমাত্র পানি খেয়ে বেঁচে থাকছেন দিনের পর দিন এমন বৌদ্ধ ভিক্ষুগনের উদাহরণ আমরা জানি।
বিশ্বাস করা হয় যে উপবাস তথা পানাহার থেকে বিরত থাকার নির্দিষ্ট সংযম পালনের দ্বারা মানুষ ধ্যানের এমনস্তরে উন্নীত হতে পারে যেখানে অন্য কোনোভাবেই উন্নীত হওয়া যায় না যার ফলে, এই ধ্যানের মাধ্যমে, মানুষ লাভকরে অসীম স্রষ্টায় লীন হবার সুখ, পরমের সাহচর্য অর্জনের উপায়।
বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা গেছে যে, নিয়ৎ সহ যদি বিশেষভাবেই নির্দিষ্ট কতিপয় অনুশাসনপ্রক্রিয়া মান্য করে উপবাসঅব্যাহত রাখা হয় তাহলে মানুষের শারীরবৃত্তীয় পরিপাক-বিপাক ইত্যাদির প্রতিক্রিয়া প্রশমিতকরণের মাধ্যমেআমাদেরকে এমন দিকে ধাবিত করে যেদিক দিয়ে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় — এবং এভাবে এমন একটিজীবনে প্রবেশ করা সম্ভব যেখানে কেবলই নতুন নতুন আবিষ্কারের উদ্ভাসনে উজ্জ্বল হ পারে আমাদের দুনিয়া।
আবিষ্কারগুলো, বলা বাহুল্য, শুধু শরীরবৃত্তীয় প্রশান্ত উদ্ভাসনেই সীমাবদ্ধ নয় বরং অনেক বেশি মানসকেন্দ্রী।
ঠিকঠাক নিয়ৎ ও ঐকান্তিক ইচ্ছা দ্বারা চালিত হয়ে কেউ যদি রোজা রাখে তাহলে তার মানসজগতে পরিবর্তনআসে মস্তিষ্কে এর প্রভাব বহুমুখী এবং অত্যন্ত তাৎপর্যগভীর; হাজার হাজার বছর ধরে তপস্বী ঋষি ও সুফিদেরমধ্যে এই পানাহারনিবৃত্ত সংযমসাধনার উদাহরণ আমাদেরকে এই ইঙ্গিতই দেয় সুস্পষ্টভাবে।
মুসলমানদের কাছে সোয়ম বা সংযম হচ্ছে এমন এক তপস্যা যা ধার্মিক তাৎপর্যমণ্ডিত, এছাড়াও এর ফলেমানবদেহ ও মানবমন পরিশুদ্ধ হয়, এর মাধ্যমে মানবিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চৈতন্য ও সঙ্কীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে মানুষবৃহতের দিকে ধাবিত হয়, বা আরেকভাবে বলা যায় যে এর মধ্য দিয়ে মানুষ ‘স্রষ্টার চৈতন্য’ বা ‘তাকওয়া’ লাভেরপথে অগ্রসর হতে পারে।
চলবে......
No comments:
Post a Comment