The New Maqsood O' dHAKA Video - Jooger Montrona - 2014

https://www.youtube.com/watch?v=0vcyii-NJMA

Tuesday, April 28, 2020

সিয়াম সাধনার গোপন কথা ও আমাদের পেটুক ভ্রষ্টাচার / পর্ব ২

মাকসুদুল হক 


(২০১৩- মূল ইংরেজি লেখার বঙ্গানুবাদ করেছেন Zahed Ahmed)

রামাদান’ বা রমজান মাসেই নবি মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট কোরান অবতীর্ণ হয়েছিল। যদিও কোরান নাজেলেরসময় হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় নবিজির তপস্যাধ্যান  ধৈর্য কৃচ্ছতার ব্যাপারে আমরা অতি অল্পই জানিকিন্তুআন্দাজ করতে পারি যে এইভাবে সংযম বা সোয়মের অনুশীলন শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পনেরোশ বছরআগেএবং এটা হচ্ছে আরব অঞ্চলের সেই মরুভূমির রুক্ষ পাথুরে গরমে অসহনীয় আবহাওয়ায় হেরাপার্বত্যগুহার নির্জনতায় নবি মুহম্মদের কঠোর কৃচ্ছসাধনার সামান্য নজির মাত্রসম্পূর্ণ সংযমচিত্র নয়।

আল্লাহর ‘ওহি’ বা বাণী অবতরণকালে ফেরেশতা জিব্রাইল নবিজির নিকটে এসে তাঁকে নিয়মিত প্রস্তুত করছিলেনযেন পরম স্রষ্টা  পালনকর্তার বাণী তিনি বিন্যাস্তরূপে গ্রহণ করতে পারেন এবং স্রষ্টার কথাসমগ্র প্রচার করেনকুলমখলুকাতের কল্যাণকল্পেএই কথামালা আদৌ শুধু ‘মুসলিম’ বা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মগোষ্ঠীর জন্যই নিবেদিততা নয়এই নির্দেশনামালা  বাণীমঞ্জরি সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে বলা আল্লাহর বার্তা। 

তবে ধ্যান বা সাধনার অন্যতম পূর্বশর্ত উপবাস বা রোজা মোটেও নতুন কিছু নয়এমনও নয় যে ইসলামের আগেএর প্রচলন ছিল না। আদিকাল থেকে একেশ্বরবাদী নবি-রসুল সকলেরই সাধনার ক্ষেত্রে উপবাস বা রোজা কার্যকরদেখা যায়ইব্রাহিমমুসাইসা ছাড়াও উনাদের অনুসারী পয়গম্বর  সর্বসাধারণের জন্য কতিপয় নিয়মের ভিত্তিতেউপবাস করা ধার্য ছিল এবং সবই ছিল সাধনভজনের নিমিত্তে কৃচ্ছতার অংশ যুগে যুগে নবি রসুলদের মাধ্যমেপ্রচারিত বাণীর বিভিন্নতা থাকলেও উপাসনার অংশ হিসেবে সংযমসাধনা তথা উপবাসের চর্চা ছিল অভিন্ন।

প্রশ্ন জাগেকেন

স্রষ্টা তথা আল্লাহ বা ঈশ্বর বা ‘গড’ নামের একটি অদৃশ্য নির্দিষ্ট অস্তিত্বকে ‘সন্তুষ্ট’ করতে একদল মানব মানবীনিজেদেরকে অভুক্ত রেখে কেন কঠোর কৃচ্ছতা পালনের পথ অনুসরণ করে আসছেসেইসঙ্গে এই প্রশ্নও ওঠে যেআল্লাহর সন্তুষ্টি’ লাভের জন্যে যে রোজা বা উপোসএর ফলে বান্দাদের তথা আমাদের সরাসরি সুফল মিলছেকোথায়আরও প্রশ্ন ওঠেএকমাসের এই দীর্ঘ রোজা পালনের পর ‘আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন’ কি না তার কোনোপ্রমাণ কি আমরা পাই?

প্রত্যক্ষপরোক্ষউক্ত অনুক্ত উত্তরের আশায় আমরা নানাবিধ ধর্মগ্রন্থ পর্যালোচনা না করেওধর্মীয় কিতাব কালামের কথানিহিত রূপক প্রতীকের দ্যোতনা পাঠান্তরের জন্য গলদঘর্ম না হয়েওসংলগ্ন বা দূরবর্তী হুজুর পিরসাহেবদের নিকট দৌড়ঝাঁপ না করেও শধু যদি নিজেদের সাধারণ ধ্যানধারণা বা কাণ্ডজ্ঞানটাকে ঠিকঠাকভাবেআমরা কাজে লাগাইনিশ্চয় একটা কার্যকর উত্তর পেয়ে যাই কিছুমাত্র সচেষ্ট হলে এই কাজটা করার সময়বিভ্রান্তিলাঘবের আশায় উত্তর তালাশের সময়,‘আল্লাহর সন্তুষ্টি’ অর্জনের ধারণাটার মধ্যে যে-ভ্রান্তি আছে তা আগেলাঘবের জন্য সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক। এইভাবে এগোলে যে উত্তরমালা আমাদের হাতে আসবে তা হবে অনেক বেশিমানবিক  মানবীয় কল্যাণগুণসম্পন্ন।

যেহেতু কোরান অবতীর্ণ হয়েছিল মানবজাতির কল্যাণসাধন  করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যেযেখানে মানুষের মঙ্গলের উপরেই নিশ্চিতভাবে জোরারোপ করা আছেবলা হয়েছে ‘আশরাফুল মখলুকাত’ বা যারকাছাকাছি অর্থ হয় ‘স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি’ এবং তাদেরই কল্যাণকল্পে এই গ্রন্থের সমস্ত কথামালা এমন যদি হতো যেএই পবিত্র গ্রন্থের কেন্দ্রে মানবকল্যাণ থাকত নাতাহলে কেমন হতো

যদি মানবকল্যাণের ধারণাটা কোরানের কেন্দ্রীয় কথা না  হতোতখনওতারপরও অন্তত তিনটি বিশেষ ক্ষমতাবা ক্রাইটেরিয়া থাকত স্বয়ং স্রষ্টার হাতেযে ত্রয়ী আমাদের অস্তিত্বের তিন প্রধান  জরুরি নিয়ামক

এই তিনটাই নিঃসন্দেহে ‘অ্যাক্টস্ অফ গড’; যথাক্রমে —  জন্ম তথা ‘হায়াত’ বা আয়ু, ‘মউত’ বা মৃত্যুএবংরিজিক’ বা জীবিকা। 

চলবে.......

সিয়াম সাধনার গোপন কথা ও আমাদের পেটুক ভ্রষ্টাচার / পর্ব ১



মাকসুদুল হক 

(২০১৩র মূল ইংরেজি লেখার বঙ্গানুবাদ করেছেন   Zahed Ahmed) 

যা জানো না তা স্বীকার করোতোমার জানা নিয়া তুমি বিনয়ী হওতুমি আজকে যা জানলে তা ধারণ করোসবসময় যে সচেষ্ট  সত্যনিষ্ঠ সে- তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ

রামাদান  বা রমজান হচ্ছে ‘সোয়ম’ পালনের মাসবাংলায় আমরা বলি সিয়াম সাধনার মাসযখন মাসব্যাপীসংযম রক্ষার ঐশী নির্দেশ রয়েছে অনেকেই আমরা আহ্নিক মেনে উপবাস করিখাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকি 
দীর্ঘ উপোস করার ব্যাপারটা চৌদ্দ ঘণ্টা বা তারও বেশি হয়ে থাকে যেটা নির্ভর করে বিশ্বের কোন গোলার্ধে আপনিবাস করছেন তার ওপর এবং বেশিরভাগ মুসলিমের কাছে এই উপবাস থাকাটাই সিয়াম/সোয়ম হিশেবে গ্রাহ্য। 

উপবাস বা ‘রোজা’ পালনের পাশাপাশি সালাত বা নামাজ  অন্যান্য অনেক উপাসনা-আরাধনার মাধ্যমে আমরাআল্লাহর ‘সন্তুষ্টি’ লাভের চেষ্টা করে থাকি এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাদের উপর করুণা  কৃপা বর্ষণ করেন বলেইবিশ্বাস করি।

কাজেইউপবাস করা ছাড়াও রোজার দিনের পালনীয় আচারকৃত্যের তালিকা অনেক দীর্ঘ। ভোরের আগে জেগেউঠে সেহরিদিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কোরান তেলাওয়াতরাতের বেলায় বিশেষ তারাবি নামাজ এবংঅন্যান্য অনেক ইবাদত-বন্দেগি। 

এবং এইসবের মাঝখানে একটা আকর্ষণীয় অংশ হচ্ছে সন্ধেবেলা ব্যয়বহুল বিচিত্র খানাপিনার ইফতার যার মধ্যদিয়ে সারাদিনের দীর্ঘ উপবাস আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙা হয় এবং পরবর্তী সেহরির আগ পর্যন্ত অবারিত খানাপিনাচালানো যায়। 

এখানে উল্লেখ্য যে বেশিরভাগেরই ধারণা রোজা পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহকে খুশি করি বা আল্লাহর ‘সন্তুষ্টি’  লাভের চেষ্টা করিকিন্তু রোজার তাৎপর্যপূর্ণ দিকটা হচ্ছে যে এর মাধ্যমে গরিবের অনাহারজনিত কষ্ট উপলব্ধিকরবার এবং এর থেকে হতদরিদ্রের সহায় হবার শিক্ষা অর্জন করা।

যা হোকউপোস করা বা রোজা পালন ব্যতিক্রমী কিছু নয়এমনও নয় যে এটা খালি ইসলাম ধর্মেই আছেএকেশ্বরবাদী বিশ্বাসে বলীয়ান প্রায় সমস্ত ধর্মে এই আচারকৃত্য অবশ্যপালনীয় হিশেবে বিভিন্ন ধরনে বিভিন্ন মেয়াদেজারি আছে। 

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই কৃত্যাচারটি কেবল কয়েকটি দিনের বা মাসের মেয়াদি জিনিশ নয়এটা তাদের কাছেঅত্যন্ত কঠোর একটি শৃঙ্খলা এবং নানান নিয়মে বছরব্যাপীই প্রায় চালু। বৌদ্ধ ধর্মে সংযমের শিক্ষা অনেকপরিব্যাপ্ত।

কয়েক দিন বা কয়েক মাস কেবল নয়এমনও হয় যে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ মাসের পর মাস দিনের পর দিনতাদের সংযম সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আহার  অন্য সমস্ত জাগতিক আয়েশ বিলাস পরিহার করে চলছেনশুধুমাত্র পানি খেয়ে বেঁচে থাকছেন দিনের পর দিন এমন বৌদ্ধ ভিক্ষুগনের উদাহরণ আমরা জানি।  

বিশ্বাস করা হয় যে উপবাস তথা পানাহার থেকে বিরত থাকার নির্দিষ্ট সংযম পালনের দ্বারা মানুষ ধ্যানের এমনস্তরে উন্নীত হতে পারে যেখানে অন্য কোনোভাবেই উন্নীত হওয়া যায় না যার ফলেএই ধ্যানের মাধ্যমেমানুষ লাভকরে অসীম স্রষ্টায় লীন হবার সুখপরমের সাহচর্য অর্জনের উপায়। 

বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা গেছে যেনিয়ৎ সহ যদি বিশেষভাবেই নির্দিষ্ট কতিপয় অনুশাসনপ্রক্রিয়া মান্য করে উপবাসঅব্যাহত রাখা হয় তাহলে মানুষের শারীরবৃত্তীয় পরিপাক-বিপাক ইত্যাদির প্রতিক্রিয়া প্রশমিতকরণের মাধ্যমেআমাদেরকে এমন দিকে ধাবিত করে যেদিক দিয়ে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় — এবং এভাবে এমন একটিজীবনে প্রবেশ করা সম্ভব যেখানে কেবলই নতুন নতুন আবিষ্কারের উদ্ভাসনে উজ্জ্বল  পারে আমাদের দুনিয়া।

আবিষ্কারগুলোবলা বাহুল্যশুধু শরীরবৃত্তীয় প্রশান্ত উদ্ভাসনেই সীমাবদ্ধ নয় বরং অনেক বেশি মানসকেন্দ্রী।

ঠিকঠাক নিয়ৎ  ঐকান্তিক ইচ্ছা দ্বারা চালিত হয়ে কেউ যদি রোজা রাখে তাহলে তার মানসজগতে পরিবর্তনআসে মস্তিষ্কে এর প্রভাব বহুমুখী এবং অত্যন্ত তাৎপর্যগভীরহাজার হাজার বছর ধরে তপস্বী ঋষি  সুফিদেরমধ্যে এই পানাহারনিবৃত্ত সংযমসাধনার উদাহরণ আমাদেরকে এই ইঙ্গিতই দেয় সুস্পষ্টভাবে। 

মুসলমানদের কাছে সোয়ম বা সংযম হচ্ছে এমন এক তপস্যা যা ধার্মিক তাৎপর্যমণ্ডিতএছাড়াও এর ফলেমানবদেহ  মানবমন পরিশুদ্ধ হয়এর মাধ্যমে মানবিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চৈতন্য  সঙ্কীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে মানুষবৃহতের দিকে ধাবিত হয়বা আরেকভাবে বলা যায় যে এর মধ্য দিয়ে মানুষ ‘স্রষ্টার চৈতন্য’ বা ‘তাকওয়া’ লাভেরপথে অগ্রসর হতে পারে।

চলবে......