(২০১৩-র মূল ইংরেজি লেখার বঙ্গানুবাদ করেছেন Zahed Ahmed)
‘রামাদান’ বা রমজান মাসেই নবি মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট কোরান অবতীর্ণ হয়েছিল। যদিও কোরান নাজেলেরসময় হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় নবিজির তপস্যা, ধ্যান ও ধৈর্য কৃচ্ছতার ব্যাপারে আমরা অতি অল্পই জানি; কিন্তুআন্দাজ করতে পারি যে এইভাবে সংযম বা সোয়মের অনুশীলন শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পনেরোশ বছরআগে, এবং এটা হচ্ছে আরব অঞ্চলের সেই মরুভূমির রুক্ষ পাথুরে গরমে অসহনীয় আবহাওয়ায় হেরাপার্বত্যগুহার নির্জনতায় নবি মুহম্মদের কঠোর কৃচ্ছসাধনার সামান্য নজির মাত্র, সম্পূর্ণ সংযমচিত্র নয়।
আল্লাহর ‘ওহি’ বা বাণী অবতরণকালে ফেরেশতা জিব্রাইল নবিজির নিকটে এসে তাঁকে নিয়মিত প্রস্তুত করছিলেনযেন পরম স্রষ্টা ও পালনকর্তার বাণী তিনি বিন্যাস্তরূপে গ্রহণ করতে পারেন এবং স্রষ্টার কথাসমগ্র প্রচার করেনকুলমখলুকাতের কল্যাণকল্পেএই কথামালা আদৌ শুধু ‘মুসলিম’ বা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মগোষ্ঠীর জন্যই নিবেদিততা নয়, এই নির্দেশনামালা ও বাণীমঞ্জরি সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে বলা আল্লাহর বার্তা।
তবে ধ্যান বা সাধনার অন্যতম পূর্বশর্ত উপবাস বা রোজা মোটেও নতুন কিছু নয়, এমনও নয় যে ইসলামের আগেএর প্রচলন ছিল না। আদিকাল থেকে একেশ্বরবাদী নবি-রসুল সকলেরই সাধনার ক্ষেত্রে উপবাস বা রোজা কার্যকরদেখা যায়; ইব্রাহিম, মুসা, ইসা ছাড়াও উনাদের অনুসারী পয়গম্বর ও সর্বসাধারণের জন্য কতিপয় নিয়মের ভিত্তিতেউপবাস করা ধার্য ছিল এবং সবই ছিল সাধনভজনের নিমিত্তে কৃচ্ছতার অংশ যুগে যুগে নবি রসুলদের মাধ্যমেপ্রচারিত বাণীর বিভিন্নতা থাকলেও উপাসনার অংশ হিসেবে সংযমসাধনা তথা উপবাসের চর্চা ছিল অভিন্ন।
প্রশ্ন জাগে, কেন?
স্রষ্টা তথা আল্লাহ বা ঈশ্বর বা ‘গড’ নামের একটি অদৃশ্য নির্দিষ্ট অস্তিত্বকে ‘সন্তুষ্ট’ করতে একদল মানব মানবীনিজেদেরকে অভুক্ত রেখে কেন কঠোর কৃচ্ছতা পালনের পথ অনুসরণ করে আসছে? সেইসঙ্গে এই প্রশ্নও ওঠে যে‘আল্লাহর সন্তুষ্টি’ লাভের জন্যে যে রোজা বা উপোস, এর ফলে বান্দাদের তথা আমাদের সরাসরি সুফল মিলছেকোথায়? আরও প্রশ্ন ওঠে, একমাসের এই দীর্ঘ রোজা পালনের পর ‘আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন’ কি না তার কোনোপ্রমাণ কি আমরা পাই?
প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ, উক্ত অনুক্ত উত্তরের আশায় আমরা নানাবিধ ধর্মগ্রন্থ পর্যালোচনা না করেও, ধর্মীয় কিতাব কালামের কথানিহিত রূপক প্রতীকের দ্যোতনা পাঠান্তরের জন্য গলদঘর্ম না হয়েও, সংলগ্ন বা দূরবর্তী হুজুর পিরসাহেবদের নিকট দৌড়ঝাঁপ না করেও শধু যদি নিজেদের সাধারণ ধ্যানধারণা বা কাণ্ডজ্ঞানটাকে ঠিকঠাকভাবেআমরা কাজে লাগাই, নিশ্চয় একটা কার্যকর উত্তর পেয়ে যাই কিছুমাত্র সচেষ্ট হলে এই কাজটা করার সময়, বিভ্রান্তিলাঘবের আশায় উত্তর তালাশের সময়,‘আল্লাহর সন্তুষ্টি’ অর্জনের ধারণাটার মধ্যে যে-ভ্রান্তি আছে তা আগেলাঘবের জন্য সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক। এইভাবে এগোলে যে উত্তরমালা আমাদের হাতে আসবে তা হবে অনেক বেশিমানবিক ও মানবীয় কল্যাণগুণসম্পন্ন।
যেহেতু কোরান অবতীর্ণ হয়েছিল মানবজাতির কল্যাণসাধন ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে, যেখানে মানুষের মঙ্গলের উপরেই নিশ্চিতভাবে জোরারোপ করা আছে, বলা হয়েছে ‘আশরাফুল মখলুকাত’ বা যারকাছাকাছি অর্থ হয় ‘স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি’ এবং তাদেরই কল্যাণকল্পে এই গ্রন্থের সমস্ত কথামালা এমন যদি হতো যেএই পবিত্র গ্রন্থের কেন্দ্রে মানবকল্যাণ থাকত না, তাহলে কেমন হতো?
যদি মানবকল্যাণের ধারণাটা কোরানের কেন্দ্রীয় কথা না ও হতো, তখনও, তারপরও অন্তত তিনটি বিশেষ ক্ষমতাবা ক্রাইটেরিয়া থাকত স্বয়ং স্রষ্টার হাতে, যে ত্রয়ী আমাদের অস্তিত্বের তিন প্রধান ও জরুরি নিয়ামক|
এই তিনটাই নিঃসন্দেহে ‘অ্যাক্টস্ অফ গড’; যথাক্রমে — জন্ম তথা ‘হায়াত’ বা আয়ু, ‘মউত’ বা মৃত্যু, এবং‘রিজিক’ বা জীবিকা।
চলবে.......